ইউরোপের নবজাগরণ
ইউরোপের নবজাগরণ
১. নবজাগরণ এর অর্থ কি?
👉 নবজাগরণ কথাটির ব্যুৎপত্তিগত অর্থ হলো পুনর্জন্ম। নবজাগরণ বা রেনেসাঁস কথাটি হল একটি ফ্রেঞ্চ শব্দ। মধ্যযুগে মানুষের ব্যক্তিত্ব বিকাশের কোন সুযোগ ছিল না। মানুষের মানুষের চিন্তা ও মানসিক বৃত্তি সম্পূর্ণভাবে গির্জার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হত। সেদিন মানুষের স্বাধীনভাবে চিন্তা করা বা মত প্রকাশের কোন স্বাধীনতা ছিল না। দীর্ঘদিনের জড়তার পর কাল ক্রমে এক বলিষ্ঠ ও স্বাধীন চিন্তাধারায় মানুষের বিকাশ ঘটতে থাকলো। এই বিকাশকেই নবজাগরণ বা রেনেসাঁস বলা হয়।
২. নবজাগরণের প্রধান বৈশিষ্ট্য গুলি কি কি আলোচনা কর।
👉 নবজাগরণ কোন হঠাৎ ঘটা ঘটনা নয়। দীর্ঘ বিবর্তনের ফলে পঞ্চদশ ষোড়শ শতকে নবজাগরণ নিজের রূপ পরিগ্রহ করে। তাই নবজাগরণের অনেকগুলি বৈশিষ্ট্যের মধ্যে বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য নিচে আলোচনা করা হলো -
১. যুক্তিবাদ- মধ্যযুগে সবকিছুই ছিল ধর্ম নির্ভর। গির্জাতে তো ধর্মযাজক রাইছিলেন মানব জীবনের ও মানব জীবনের মূল নিয়ন্ত্রক। এ যুগের মূল কথাই ছিল সবকিছু মেনে নাও কিছু জানতে চেয়ো না। গির্জা বিরোধী যে কোন বক্তব্য ছিল ক্ষমার অযোগ্য। এই সময় অন্ধবিশ্বাসের খুব বাড়াবাড়ি ছিল। কিন্তু দ্বাদশ শতাব্দী থেকে এই ছবি বদলাতে থাকে। ল্যাটিন পন্ডিতগণ এবং দার্শনিকগণ গির্জার বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। এই সমস্ত পণ্ডিতরা, গির্জার নির্দেশ কে মানে নি।
২. প্রাচীন শিক্ষা সংস্কৃতির পুনরুদ্ধার : মধ্যযুগে গ্রিক ও ল্যাতিন সাহিত্য দর্শন অবলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। যুক্তিবাদের জায়গায় অন্ধবিশ্বাস সমগ্র ইউরোপকে ছেয়ে ফেলেছিল। তখন মানুষ ইহলোক অপেক্ষা পরলোকের চিন্তায় ভীত হয়ে ওঠে। কিন্তু ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে তুর্কিদের হাতে কনস্টান্টিনোপলের পতন ঘটলে রিকো ল্যাটিন সাহিত্যের পণ্ডিতরা তাদের প্রতিপত্র নিয়ে ইতালিতে চলে আসেন। এর ফলে ইতালিতে গ্রিক ল্যাটিন সাহিত্য দর্শনের চর্চা শুরু হয়। এই প্রাচীন সাহিত্যচর্চার মাধ্যমে শুরু হয় নবজাগরণ।
৩. নতুন জীবন দর্শন : নবজাগরণের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল মানবতাবাদ। এখানে মানুষই প্রধান। মানুষই ছিল সবকিছুর কেন্দ্রে। আগে যেখানে ছিল ধর্মের জন্য মানুষ, এখন তাহলে মানুষের জন্য ধর্ম। এই সময় মানুষ নানা প্রাকৃতিক ঘটনাকে আর দেবতার কাজ বলে মানতে রাজি ছিল না। এগুলির পিছনে যুক্তিসম্মত বৈজ্ঞানিক কারণের অনুসন্ধান করতে শুরু করে তারা।
৩. নবজাগরণের কারণগুলি কি কি ছিল?
👉 নবজাগরণের নানা কারণ এর মধ্যে প্রধান প্রধান কিছু কারণ নীচে আলোচনা করা হলো।
১. বলা হয় যে ১৪৫৩ খ্রি অনেক আগে থেকেই পন্ডিতরা ইতালির বিভিন্ন শহরে ছড়িয়ে পড়ছিলেন। আবার অনেকেই বলেন এই গৃহকো ল্যাটিন ভাষার চর্চা সর্বসাধারণের কাছে উন্মুক্ত হয়নি। তাই অনেকের মতে, এই নবজাগরণকে অভিজাত শ্রেণীর নবজাগরণ বলা হয়।
২. অনেকের মতে ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে, গুটেনবার্গ জার্মানির মেইন্স শহরে মুদ্রণযন্ত্র বা ছাপাখানা আবিষ্কার করলে নবজাগরণের চিন্তা অতি সহজে সর্বসাধারণের মধ্যে প্রচারিত হতে থাকে।
৩. অনেকের মতো তেরোশো খ্রিস্টাব্দ থেকে নবজাগরণের সূচনা হয় কারণ এই সময় থেকে গির্জা নিয়ন্ত্রিত মধ্যযুগীয় সমাজ ব্যবস্থায় ভাঙ্গন ধরতে থাকে।
নবজাগরণের সূচনাকাল নিয়ে নানা বিতর্ক থাকলেও একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে নবজাগরণ হল দীর্ঘ বিবর্তনের ফলশ্রুতি।
৪. ক্রুশেড : অনেকের মত ক্রুসেড বা ধর্মযুদ্ধের ফলে নবজাগরণের সূচনা হয়। ঐতিহাসিক মায়ারসের মতে, " ক্রুশেড এর
কারণ ছিল মধ্যযুগীয় কিন্তু তার ফলাফল ছিল আধুনিক।"
৪. সামন্ত ব্যবস্থার পতন: ত্রয়োদশ ও চতুর্দশ শতকে সামন্ত প্রথার অবসানে কৃষক শ্রমিক ব্যবসায়ী সবার মনে স্বাধীন চেতনার উন্মেষ হতে থাকে।
৫. ছাপাখানার প্রভাব : নবজাগরণের বিকাশে ছাপাখানা মুদ্রণ যন্ত্রের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। মধ্যযুগের মূল পান্ডুলিপি হাতে নকল করা হতো। এতে বেশি সময় লাগতো ভুল থাকতো। ১৪৫৪ খ্রিস্টাব্দে জার্মানির মেনস নামক শহরে গুটেনবার্গ সর্বপ্রথম মুদ্রণযন্ত্র বাবুই চাপাবার পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। সম্ভবত ল্যাটিন বাইবেল হল প্রথম মুদ্রিত পুস্তক।
Pdf Link through our telegram channel -
এই রঙিন শব্দে ক্লিক করুন এবং তারপর লিংকটিতে প্রেস করুন - ইউরোপের নবজাগরণ notes.
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন