ধর্মসংস্কার আন্দোলন
।ধর্মসংস্কার আন্দোলন।
১) ধর্ম সংস্কার আন্দোলন বলতে কী বোঝো?
ইউরোপে পোপের একচ্ছত্র কর্তৃত্ব ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে আন্দোলন শুরু হয়, তাকে রিফরমেশন বা ধর্ম সংস্কার আন্দোলন বলা হয়।
২) ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের কারণগুলি কি ছিল?
ক ) গির্জা ও পোপের দুর্নীতি - আমরা জানি খ্রিস্টানদের ধর্মগুরু ছিলেন পোপ। তিনি নিজেকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি বলে মনে করতেন। যুগ যুগ ধরে সাধারণ ব্যক্তিদের দানে গির্জার সম্পত্তি প্রচুর পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছিল এবং এভাবে অনেক জমির মালিক ছিল গির্জা। কিন্তু এর জন্য গির্জাকে কোন ধরনের কর দিতে হতো না। উল্টে সাধারণ গরিব মানুষকে নানা ধরনের কর (Tax) দিতে হতো। যেমন ধর্ম কর, বার্ষিক কর, জন্ম কর, মৃত্যু কর প্রভৃতি। পোপ এই টাকা নিজেদের ভোগ ও বিলাসে ব্যয় করতেন এবং অনৈতিক জীবন যাপন করতেন। মদ্যপান ছিল তাদের নিত্য সঙ্গী। তখন নানা রাজনৈতিক ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করতেন। তারা ঈশ্বরের উপাসনা বাদ দিয়ে জাঁকজমক সহ রাজনৈতিক প্রধানী যুক্ত হতেন। পপেরা ধর্মের নানা অপব্যাখ্যা করতেন ও স্বর্গের লোভ দেখিয়ে তাদের কাছে একপ্রকার ছাড়পত্র বিক্রি করে অর্থ আদায় করতেন।
নবজাগরণের প্রভাব :- মধ্যযুগে মানুষের জীবনের কেন্দ্রস্থলে ছিল গির্জা। কিন্তু নবজাগরণ মানুষের মনে যুক্তিবাদ ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির সূচনা করে। যার ফলে পপের একচেটিয়া কর্তৃত্ব দুর্নীতির বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলতে শুরু করে।
পোপ ও রাজাদের দ্বন্দ্ব : মধ্যযুগে পাপেরা নিজেদেরকে ঈশ্বরের প্রতিনিধি বলে মনে করতেন। তারা মনে করতেন রাজারা তাদের নির্দেশ মেনে চলতে বাধ্য। রাজা আর টোপেদের এই সংঘর্ষের ফলে বিভিন্ন রাষ্ট্রের জাতীয়তাবোধ বৃদ্ধি পায়। এবং এই জাতীয়তাবোধ থেকে জাতীয় গির্জা ধারণা জন্ম নেয়।
![]() |
জন ওয়াইক্লিফ |
৩) জন ওয়াই ক্লিফ সম্পর্কে যা জানো লেখ।
জন ওয়াই ক্লিফ ছিলেন ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক। চতুর্দশ শতাব্দীতে গির্জার দুর্নীতি বন্যায় বিরুদ্ধে তিনি প্রতিবাদ জানান। তিনি সর্বপ্রথম বাইবেলের ইংরেজি অনুবাদ করেন। সাধারণ মানুষরা নিজেদের বাইবেল পড়তেও বুঝতে পারে। প্রকৃতপক্ষে এই সময় থেকেই ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের সূচনা হয়। নিজের মতবাদ প্রচারের জন্য গরীব কৃষকদের নিয়ে তিনি একটি সংস্থা গঠন করেন। এই সংস্থা তে তিনি মানুষের অধিকারের কথা বলতেন। তার সমর্থকদের লোলার্ড বলা হতো। বিদ্রোহী কৃষকরা গির্জার ভূসম্পত্তি লুটপাট করে। শেষ পর্যন্ত নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের দ্বারা বিদ্রোহ দমন করা হয়।
৪) জন হাস সম্পর্কে যা জান লেখ।
জ্বর এসেছিলেন একজন অধ্যাপক। তিনি ছিলেন ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের একজন শরিক। তিনি চেকোস্লোভাকিয়ায় জন ওয়াই ট্রিপিল চিন্তা ধারাকে ছড়িয়ে দেন। ১৪২১ খ্রিস্টাব্দে পপ টাকা সংগ্রহের উদ্দেশ্যে ছাড়পত্র বিক্রি করতে এলে, তিনি এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান। তোর টাকে নাস্তিক আখ্যা দেন এবং তাকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়।
৫) ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের অগ্রদূত কাকে বলা হয়? কেন?
জন ওয়াই ক্লিফ কে। জন ওয়াই ক্লিফ ছিলেন ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের প্রথম শরিক সে জন্য তাকে ধর্ম সংস্কার আন্দোলনের অগ্রদূত বলা হয়।
![]() |
মার্টিন লুথার |
৬) মার্টিন লুথার সম্পর্কে যা জানো লেখ।
মার্টিন লুথার ছিলেন একজন ধর্ম সংস্কারক। তার জন্ম ১৪৮৩ সালে এবং মৃত্যু ১৫৪৬ সালে। তিনি ছিলেন জার্মানির একজন বাসিন্দা। সাধারণ গরিব কৃষক পরিবারে তিনি জন্মগ্রহণ করেন এবং ছাত্র অবস্থাতেই সন্ন্যাস গ্রহণ করেন।পোপ দের দুর্নীতি দেখে তিনি পোপের সঙ্গে দেখা করেন এবং দুর্নীতি দূর করার জন্য অনুরোধ জানান। বলা বাহুল্যতার আবেদনে পোপ পাত্তা দেননি। এরপর দশম লিয়র প্রতিনিধি টেট জেল যখন রুমে আসেন, তখন তিনি সেন্ট পিটার্স গির্জার সংস্কারের জন্য টাকা সংগ্রহের উদ্দেশ্যে জার্মানিতে আসেন। সেখানে এসে তিনি পাপ মুক্তির ছাড়পত্র বিক্রি করতে শুরু করেন। লুথার এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানান। সেকালের নিয়ম অনুসারে লুথার ১৫১৭ সালের, অক্টোবর মাসে উইতেন বার্গ গির্জার দরজায় ৯৫ দফা অভিযোগ সম্বলিত একটি প্রতিবাদ পত্র টাঙ্গিয়ে দেন এবং তিনি তার মত ভ্রান্ত বলে প্রমাণ করার আহ্বান জানান। এর উত্তরে টেটজেল 106 টি প্রতি প্রশ্ন ছড়িয়ে বিলি করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা এতে অগ্নিসংযোগ করে। মডেল লুথারই ছিলেন প্রতিবাদী খ্রিস্ট ধর্মের প্রবক্তা।
৭) প্রতিবাদী খ্রিস্টধর্ম বা প্রোটোস্টান্টিজম কি?
মাটির লুথার তোদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। ক্যাথলিক অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি রুখে দাঁড়ান। এবং তিনি তা সংশোধন করতে বলেন। কিন্তু পোপ মেনে নিতে চাননি।যার ফলে লুথার নিজস্ব ধর্ম মত প্রকাশ করেন। ক্যাথলিক ধর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের মাধ্যমে লুথার তার ধর্মমত প্রকাশ করেছিলেন বলে তার ধর্মমতকে প্রতিবাদী খ্রিস্ট ধর্ম বা প্রোটিস্টান্তিজম বলা হয়।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন